গ্রীষ্ম মানেই টাটকা আমের মরশুম, আর কাঁচা আম দিয়ে তৈরি নানা পদ এই গরমের ক্লান্তি দূর করে। কাঁচা আমের টক-মিষ্টি স্বাদ আর তার সাথে ডালের পুষ্টি – এই দুইয়ের মেলবন্ধনে তৈরি আম ডাল হলো গরমকালের বাঙালি রান্নাঘরের এক অপরিহার্য পদ।
গরম ভাতের সাথে এক বাটি ঠান্ডা ঠান্ডা আম ডাল পেলে মন আর শরীর দুটোই শান্তি পায়। এই পদটি তৈরি করাও খুব সহজ। চলুন, দেরি না করে শিখে নিই গরমের এই স্পেশাল কাঁচা আমের ডাল তৈরির সহজ রেসিপি।
কেন টক আম ডাল এই গরমে এত প্রিয়?
কৃষকবন্ধু প্রকল্প 2024 | KrishakBandhu Status check 2024
কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C (Vitamin C), যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গরমে হিট স্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতেও কাঁচা আম খুব উপকারী। ডালের প্রোটিন আর ফাইবার শরীরের জন্য জরুরি। কাঁচা আমের টক স্বাদ হজমেও সাহায্য করে। সব মিলিয়ে আম ডাল শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর গ্রীষ্মকালীন খাবারও।
উপকরণ (Ingredients):
আপনার রান্নাঘরের সহজলভ্য উপকরণ দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারেন এই সুস্বাদু আম ডাল:
- মুসুর ডাল (বা আপনার পছন্দের যেকোনো ডাল, যেমন মটর ডাল বা অরহর ডাল Or Toor Daal ): ১-2 কাপ (প্রয়োজন অনুযায়ী)
- কাঁচা আম: ১টি মাঝারি সাইজের (খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরো করে কাটা)
- হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
- নুন: স্বাদমতো
- চিনি: সামান্য (ঐচ্ছিক, টক-মিষ্টি স্বাদ চাইলে)
- সর্ষের তেল: ১ – ২ চা চামচ
- ফোড়নের জন্য:
- সর্ষের তেল: ১ চা চামচ
- কালো সর্ষে বা পাঁচ ফোড়ন: ১/২ চা চামচ
- শুকনো লঙ্কা: ১ – ২টি
- কাঁচা লঙ্কা: ১ – ২টি (মাঝখান থেকে চিরে নেওয়া)
- হিং (ঐচ্ছিক): এক চিমটি
- কারিপাতা (ঐচ্ছিক): ৫-৬টি
- সর্ষের তেল: ১ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী (Preparation Steps):
এই সহজ পদ্ধতিতে খুব সহজেই বানিয়ে নিন গরমের প্রিয় আম ডাল:
১. ডাল সেদ্ধ করা: প্রথমে ডাল ভালো করে ২-৩ বার জলে ধুয়ে নিন। এবার প্রেসার কুকারে বা একটি হাঁড়িতে ডাল, পরিমাণমতো জল (ডালের পরিমাণের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি), হলুদ গুঁড়ো এবং সামান্য নুন দিয়ে সেদ্ধ করতে বসান।
প্রেসার কুকারে ২-৩টি সিটি দিলেই ডাল সেদ্ধ হয়ে যাবে। হাঁড়িতে সেদ্ধ করলে ডাল নরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ডাল খুব বেশি গলাবেন না, একটু দানাদানা থাকলে ভালো লাগবে।
২. আম যোগ করা: ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে প্রেসার কুকারের বা হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দিন। এবার কেটে রাখা কাঁচা আমের টুকরোগুলো সেদ্ধ ডালের মধ্যে দিয়ে দিন।
৩. রান্না ও নুন-মিষ্টি সমন্বয়: মাঝারি আঁচে ডাল ও আমের মিশ্রণটি রান্না করুন। আম সেদ্ধ হয়ে নরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমের টক অনুযায়ী ডালের নুন চেখে দেখুন এবং প্রয়োজন মতো নুন যোগ করুন। যদি টক-মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করেন, তাহলে এই সময়ে সামান্য চিনি দিতে পারেন।
৪. ফোড়ন তৈরি: অন্য একটি ছোট প্যানে সর্ষের তেল গরম করুন। তেল গরম হলে কালো সর্ষে বা পাঁচ ফোড়ন দিন। সর্ষে ফুটতে শুরু করলে শুকনো লঙ্কা এবং চিরে রাখা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে হালকা ভাজুন। যদি হিং বা কারিপাতা ব্যবহার করেন, তাহলে এই সময়ে দিয়ে দিন। ফোড়নের সুন্দর গন্ধ বের হলে আঁচ বন্ধ করে দিন।
৫. ফোড়ন যোগ: তৈরি করা গরম ফোড়নটি সরাসরি সেদ্ধ আম ডালের উপর সাবধানে ঢেলে দিন। হাতা দিয়ে আলতো করে মিশিয়ে দিন।
৬. শেষের ফোঁটা: ফোড়ন মেশানোর পর ডালটিকে আর ২-৩ মিনিট হালকা আঁচে ফুটতে দিন, যাতে ফোড়নের সমস্ত গন্ধ ডালের মধ্যে ভালোভাবে মিশে যায়। এই সময়ে ডালের ঘনত্ব দেখে নিন। যদি বেশি ঘন মনে হয়, তাহলে সামান্য গরম জল যোগ করতে পারেন। নুন-মিষ্টি আবার চেখে প্রয়োজন মতো adjust করে নিন।
আপনার গরমের স্পেশাল কাঁচা আমের ডাল পরিবেশনের একদম জন্য প্রস্তুত!
পরিবেশন:
গরম ভাতের সাথে গরম গরম এই টক-মিষ্টি আম ডাল পরিবেশন করুন। গরমের দুপুরে এর চেয়ে তৃপ্তিদায়ক খাবার আর কিছুই হতে পারে না। পাশে ভাজা বা একটি ডিমসেদ্ধ থাকলে খাবার জমে যাবে।
পরিশেষে:
গরমের দুপুরে শরীরকে শীতল রাখতে এবং জিভের স্বাদ ফেরাতে কাঁচা আমের ডালের জুড়ি মেলা ভার। এই সহজ রেসিপিটি একবার চেষ্টা করলেই বুঝবেন এটি বানানো কতটা সহজ আর খেতে কতটা দারুণ। তাহলে আর দেরি কেন? এই গরমে অবশ্যই আপনার রান্নাঘরে তৈরি হোক এই স্পেশাল আম ডাল আর উপভোগ করুন পরিবারের সকলের সাথে।